Header Ads

Header ADS

ক্রিপ্টোকারেন্সি এর ভবিষ্যৎ

বিশেষ সতর্কতাঃ 
আর্টিকেল টি সম্পূর্ণ শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে লিখা। এটি পড়ে উৎসাহিত হয়ে কেউ বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয় বিক্রয় এ জড়িত হবেন না। বাংলাদেশ, বলিভিয়া, কিরগিস্থান ও ইকুয়েডর এ ৪ টি দেশে বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি ইলিগাল। বাংলাদেশ জুরিসডিকসন এ বসবাসকারি কেউ ক্রিপ্টো লেনদেন করলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই আইন অমান্য না করে আইনপ্রনেতা দের ক্রিপ্টোর উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করুন। তাহলে তারা সঠিক সিদ্দান্ত নিতে পারবেন। আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ করার জন্য একটি আইনি ও টেকনিক্যাল স্টাডি শুরু করেছে। (কমেন্ট এ লিঙ্ক) । সেটি হলে ফ্রিলান্সার ও ইনভেস্টর দের জন্য অনেক উপকার হবে আশা করি।
টেকি নন টেকি আমজনতা সবাই আর্টিকেল টা অবশ্যই পড়বেন। নিজের ও আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভালোর জন্য এ জিনিসগুলো সবার জানা প্রয়োজন। আজ হোক আর কাল হোক এগুলো আপনি জানতে পারবেন, কিন্তু ততদিনে বেশি দেরি হয়ে যাবে। এগুলো নিয়ে বাংলায় লিখা উচিত না, অনেক সেনসিটিভ ব্যাপার, শুধুমাত্র দেশের কি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এটা বোঝানোর জন্য লিখছি। অন্তত পরে বন্ধুবান্ধব দের বলতে পারব আমি ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম। এ টপিক নিয়ে যারা জানেন তারা অনেকেই মুখ বন্ধ করে থাকেন এবং শুধু নিজে এর বেনেফিট নেওয়ার চেষ্টা করেন।
আমি এর আগে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আমি যতগুলো প্রেডিকশন দিয়েছিলাম প্রায় সবগুলো অক্ষরে অক্ষরে হয়েছে। আরও কিছু প্রেডিকশন দিয়ে রাখি। এগুলো নিয়ে কারো সাথে তর্কে যাব না, ১০ বসর পরে ফলাফল টা দেখে নিলেই হবে। ( ভবিষ্যতের অ্যাবসোলুট জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে। আমি প্রেডিকশন দিচ্ছি মাত্র)
১। যখন ক্রিপ্টো মার্কেট ক্যাপ যখন ৩০ বিলিয়ন ছিল তখন বলেছিলাম বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টো মার্কেট ক্যাপ ২/৩ ট্রিলিয়ন ছড়ালে ক্রিপ্টো বাংলাদেশে বৈধ করতে বাধ্য হবে (সেটা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ক্রিপ্টো মার্কেট ক্যাপ এখন ৩০০ বিলিয়ন ডলার এর উপরে ।) এবং ২০২৭ সাল (১০ বসর) এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশের অন্যান্য ব্যাংক গুলো রিজার্ভ হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি জমা করতে থাকবে। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ বিশাল আকারে পিছিয়ে পড়বে। তার কিছুদিনের মধ্যে বেশ কিছু ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে কারণ ব্যাংক এর প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে
.
এটি প্রেডিকশন না, তবে জোরাল সম্ভাবনা আছে যে ক্রিপ্টো টেকনোলজি তে অংশগ্রহণ না করার ফলে বাংলাদেশের ধনী মানুষদের একটা বড়ো অংশ মধ্যবিত্ত হয়ে যাবে, গরিব আরও গরিব হবে ( সেটা বিশ্বের তুলনায়, দেশের ভিতরে সেটা হয়ত ফিল করা যাবেনা )। বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের একটা সেবাদাস এ পরিণত হবে। বর্তমান ভেনিজুয়েলা র মত পরিস্থিতি হতে পারে । দোয়া করি এমন যেন না হয়, আমাদের পলিসিমেকার রা যেন ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আরেকটি ব্যাপার, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ক্রিপ্টো বৈধ করার জন্য আইটি বিশেষজ্ঞ দের পরামর্শ নিচ্ছে । তবে দুঃখের ব্যাপার বাংলাদেশে আইটি পরামর্শ দাতা বলতে যাদের বুঝায় তাদের না আছে আইটি জ্ঞান, না ব্লকচেইন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা। হাইপ আর কানেকশন দিয়ে তৈরি হওয়া বিশেষজ্ঞ টিম এর পরামর্শ নিলে ফলাফল যে হিতে বিপরীত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই একটি মাত্র ক্ষেত্রে কোন ভুল করলে চলবে না কারণ এর কোন সংশোধন নেই। তাই ভাল জ্ঞানসম্পন্ন দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ এর মতামত নেওয়া জরুরি।
২। ২০৩৫- ৪০ সালের আগেই আমেরিকান ডলার বলতে পৃথিবীতে কোন মুদ্রা থাকবেনা না। হয়ত এর বদলে ডলার মূল্যামানের কোন ক্রিপ্টো বাজারে ছাড়বে আমেরিকান সরকার। যেহেতু পৃথিবীর অধিকাংশ মুদ্রা আমেরিকান ডলার এর সাথে সম্পর্কিত, তাই বাংলাদেশ টাকা বলে কোন জিনিস থাকবে না।তখনকার সরকার টাকা এর বিপরীতে প্যারালাল কোন ক্রিপ্টো বাজারে ছাড়তে বাধ্য হবে। যেমন ভেনিজুয়েলা ইতিমধ্যে পেট্রো নামে একটি ক্রিপ্টো মুদ্রা বাজারে ছাড়ছে, দুবাই ইএম ক্যাশ নামে ক্রিপ্টো চালু করেছে । এভাবে বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের ন্যাশনাল ক্রিপ্টো চালু করবে।
৩। সামনের বছর কিম্বা ১৯ সালের মধ্যে ক্রিপ্টো মার্কেট ক্যাপ ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।
৫। সামনের ৫ /১০ বসর টেকনোলজি ও বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না এমন অনেক আলেম, উলেমা ক্রিপ্টো এর বিরোধিতা করবেন, কিন্তু যখন এটি পপুলার হয়ে যাবে তখন একে হালাল হিসেবে মেনে নিবেন। যেমন আগে মাইক ব্যবহার করে আজান দেওয়া হারাম ছিল, এখন হালাল হয়ে গেছে ব্যাপারটা এমন হবে। আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না, তবে সম্মানিত আলেম দের একটি বড়ো অংশ ফাইনান্স ও টেকনোলজি এর জ্ঞান না থাকার কারণে এমন টি হবে। আমি মনে করি ফিয়াট কারেন্সি, যেমন - ডলার বা টাকা ব্যবহার এর থেকে ক্রিপ্টো অধিকতর হালাল। কারণ এখানে কোন জোচ্চুরি এর উপায় নেই, এর টেঞ্জিবল মূল্যমান হচ্ছে এর অন্তর্নিহিত টেকনোলজি এবং কম্পিউটিং পাওয়ার। নতুন টেকনোলজি হওয়ার কারণে এটি এখনও অনেক ভলাটাইল, তবে দিন দিন এটি স্থির হতে থাকবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ?
ক্রিপ্টো কারেন্সি হচ্ছে ব্লকচেইন ভিত্তিক এক ধরনের ডিসেন্ট্রালাইজড কারেন্সি যার কন্ট্রোল কারো হাতে নেই। এটি নিজে নিজেই চলে এবং সরকার, সংস্থা, বাক্তি বা কোম্পানির উপর নির্ভরশীল নয়। এটি এমন একটি অর্থ/মানি যা সেকেন্ড এ পৃথিবীর এক মাথা থেকে আরেক মাথায় পাঠানো যায়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এ সিস্টেম এ একটি ডিসেন্ট্রালাইজড লেজার থাকে যেখানে কে কাকে কত টাকা দিল, কার কাছে কত টাকা আছে সব হিসাব থাকে, এগুলো ওই ইকোসিস্টেম এর প্রত্যেক পার্টি (কম্পিউটার ) নিজেরা ভেরিফাই করে . ফলে কোন চুরি, ফাকি দেওয়া, কিম্বা হ্যাক হওয়ার কোন সুযোগ থাকেনা। এখন প্রশ্ন আসবে তাহলে এত বড় একটা নেটওয়ার্ক চালায় কারা ? এটি কেউ একক ভাবে চালায় না। সমগ্র পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার (সব মিলিয়ে কয়েক শত সুপার কম্পিউটার এর সমান) দিয়ে জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এই নেটওয়ার্ক টি চালু রাখেন । এদের বলা হয় মাইনার। অনেক টা সোনার খনি থেকে সোনা আহরণ এর মত। এই ভলান্টিয়ার কাজের বিনিময়ে মাইনার রা ফি এবং নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি পান নেটওয়ার্ক থেকে।
সাধারণত আপনার এতটুকু জানলেই চলবে। এর বেশি জানতে হলে ইন্টারনেট থেকে অনেক ইনফরমেসন পাবেন ।
ক্রিপ্টো এর মূল্য কোথা থেকে আসে?
অনেকেই এ প্রশ্ন করেন । তাহলে নিজেকে এ প্রশ্ন করুন, আমেরিকান ডলার এর মূল্য কই থেকে আসে ? আমেরিকান ডলার এখন আর সোনা জমিয়ে এর বিপরীতে ছাপানো হয় না
(১৯৭৫ সালের পর থেকে ) , তবুও কেন আমরা ডলার দিয়ে কেনাবেচা করতে পারি ? এর কারণ হল সম্পূর্ণ বিশ্বাস। এজন্য কাগুজি মুদ্রা কে বলা হয় ফিয়াট কারেন্সি যার অর্থ বিশ্বাস করে নেওয়া। আমরা সবাই মিলে বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে একশো টাকার নোট এর একটা মূল্য আছে তাই এর মূল্য আছে।
আমেরিকা যেহেতু একটু শক্তিশালী দেশ তাই পৃথিবীর প্রায় অনেক দেশে অ্যামেরিকান মুদ্রা কে রিজার্ভ করে এর বিপরীতে টাকা ছাপায়। ব্যাপারটা অদ্ভুত। অ্যামেরিকান মুদ্রা এর পিছনে কোন ব্যাক আপ নেই, আবার সেটাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য মুদ্রা ছাপানো হয়।তাহলে কারোই কোন ব্যাক আপ নেই। এজন্য একজন অ্যামেরিকান বিশেষজ্ঞ বলেছেন " ডলার কিভাবে তৈরি হয় আর কিভাবে চলে এটা যদি সবাই জানত তাহলে পরদিন সকালেই একটা দাঙ্গা লেগে যেতো ""
আর আরেক কথা, যদি ডলার এর পিছনে সোনা মজুদ থাকতো তাহলেই বা কি যায় আসে ? সোনার যে দাম আছে এটা আমরা কিভাবে পেলাম ? বিশ্বাস থেকে নয় কি ? সোনা কি খাওয়া যায় না সোনা দিয়ে দালান কোঠা বানানো যায় ? মানব জাতি সেই আদিম কাল থেকে বিশ্বাস করে নিয়েছে সোনা একটি মূল্যবান বস্তু, কারণ এটি দুষ্প্রাপ্য।
ক্রিপ্টো এর ইনট্রিনসিক মূল্যমান আসে তার প্রতি মানুষ এর বিশ্বাস এর কারণে, যেটি দিন দিন বাড়ছে বহির্বিশ্বে। এছাড়া এটি দুষ্প্রাপ্য, এটি মাইন করতে অনেক বিদ্যুৎ ও কম্পিউটিং পাওয়ার লাগে যেটি খরচের ব্যাপার । এটিকে হ্যাক করা যায়না। খবরে যে হ্যাক এর তথ্য পাই সেটি হচ্ছে একেচেঞ্জ বা ওয়ালেট হ্যাক।বিদ্যমান টেকনোলজি দিয়ে অরিজিনাল ব্লকচেইন হ্যাক করা যায়না। যেমন বর্তমানে মাত্র একটা কয়েন হ্যাক করার জন্য যে কম্পিউটেশন পাওয়ার লাগবে তার মূল্য হচ্ছে ৩২ বিলিয়ন ডলার। কোন পাগলও হ্যাক করতে যাবেনা। একটা ফেক বিটকয়েন তৈরি করতে ৩২ বিলিয়ন ডলার লাগে অথচ আসল বিটকয়েন এর বর্তমান বাজারমূল্য ১৫ হাজার ডলার। এখানেই আছে ক্রিপ্টো এর অন্তরনিহিত মূল্যমান।
বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপট 
বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু না জেনে না বুঝে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ক্রিপ্টো কারেন্সি বন্ধ করে দেয়। তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত ছিল যেমন মানি লন্ডারিং, অর্থ গোপন ও পাচার এসব একটি লিগাল ফ্রেমওয়ারক এর আওতায় এনে সহজেই সমাধান করা যেতো এবং ক্রিপ্টো ক্রয় বিক্রয় এ VAT / ট্যাক্স আরোপ করে সরকার সহজেই লাভবান হতে পারত। এখন সে ভুল বুঝতে পারলেও অনেক দেরি হয়ে গেছে, এতদিনে দাম ৫০ গুন বেড়ে গেছে। আমেরিকা ইউরোপ পরের কথা ভারত চীন পাকিস্থান এমনকি আফগানিস্তান এ পর্যন্ত এটি বৈধ অথচ আমাদের পলিসিমেকার রা একটাকে অবৈধ করে রাখলেন এতদিন। বিল গেটস, রিচার্ড ব্রান্সন এর মত মানুষজন যখন কোন টেকনোলজি কে নেক্সট বিগ থিং হিসবে স্বীকৃতি দেয় তখন সেটা একটু মনোযোগ এর দাবি রাখে । উধাহরন স্বরূপ বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ফিউচার মার্কেট CBOE তে বিটকয়েন চালু হয়েছে। মাইক্রোসফট থেকে সুরু করে বড়ো বড়ো জায়ান্ট কোম্পানি গুলো এখন এটিকে পেমেন্ট হিসেবে একসেপ্ট করে। জাপান এর টোকিয়ো তে প্রায় ৪০০০ হাজার দোকান পাবেন যেখানে ক্রিপ্টো একসেপ্ট করে।
চাকা বা আগুণ এর পরে ক্রিপ্টো কারেন্সি মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড়ো এক্সপেরিমেন্ট। যেকোনো টেকনোলজি এক্সপেরিমেন্ট এ একটা জাতির অন্তত কিছু মানুষের এর অংশগ্রহণ থাকতে হয়, তাতে করে যদি সেটা লাভবান হয় তাহলে জাতির উপকার, ক্ষতি হলে পুষিয়ে নেওয়া যায়। বাংলাদেশের ধনী মানুষদের একটা ক্ষুদ্র অংশ কে যদি প্রথম থেকে ক্রিপ্টো তে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেওয়া হত তাহলে ক্রিপ্টো যদি সত্যি সত্যি অর্থ ও টাকা কে চেঞ্জ করে ফেলে তাহলে আমাদের হাতে একটা ব্যাক আপ থাকতো। তা না পারলে অন্তত বাংলাদেশ ব্যাংক যদি কিছু ক্রিপ্টো কিনে রাখত, একটা আশ্বস্তটা থাকতো যে বাংলাদেশ তলিয়ে যাবে না। কিন্তু সেটাও করা হয়নি। বাংলাদেশী ব্যাংক গুলো যদি ভবিষ্যতে এখনকার ১ টাকার জিনিস ১০০০ টাকায় কিনে তাহলে কার লাভ হবে ? বিদেশিদের যারা আগেভাগে এ টেকনোলজি তে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল লাভ তাদের । আমরা আজিবন লুজার থেকে গেলাম র কি। উন্নত দেশের কিছুই হবেনা, আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশ আজীবন উন্নয়নশীল থেকে যাবে। এটা মোটেই জাস্টিফাইড না।
যদি এই ক্রিপ্টো এক্সপেরিমেন্ট ফেইল করে তাহলে ঠিক আছে, কিন্তু যদি ফেইল না করে তাহলে ভেবে দেখুন কি বিপদে পড়বেন। কাল সকালে যদি উঠে দেখেন আপনার কষ্টার্জিত জমানো ১০ লাখ টাকা ১ লাখ হয়ে গেছে তাহলে কেমন লাগবে ? টাকার হিসেবে ওটা ১০ লাখ থাকবে কিন্তু কিছু কিনতে গেলে ১০ গুন দাম পড়বে। ১২৫ টাকায় পিয়াজ কিনেই এই অবস্থা তাহলে তখন পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে ?
ক্রিপ্টো যদি আসলেই ডলার এর জায়গা নিয়ে নেয়, সে ভয় থেকে উন্নত বিশ্বের ব্যাংক ও সাধারণ ইনভেস্টর রা তাদের সম্পদ এর ১% থেকে ১০% এখানে রেখে দিচ্ছে যেন রিস্ক না থাকে এবং যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা যায়।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং বা সরকারি আইন প্রণেতা দের জন্য আমার সাজেশন
১। আমলা তান্ত্রিক জটিলতা বা কোন দেরি না করে বাংলাদেশ ব্যাংক এর অধীনে অন্তত ১০০ মিলিওন ডলারের একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ফান্ড গঠন করা, যার " প্রাইভেট কি" শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক চেয়ারম্যান এর কাছে থাকবে। এটি রিজার্ভ হিসেবে থাকবে। এ রিস্ক আমাদের নিতেই হবে। যেমন বুলগেরিয়া সরকারের কাছে যে পরিমাণ বিটকয়েন ছিল তা বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার যা দিয়ে তাদের জাতীয় ঋণ এর এক পঞ্চমাংশ শোধ করে দেওয়া সম্ভব।
২। ক্রিপ্টো কে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয় আসা যাতে সবাই এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে আবার কেউ যেন এর অপবাবহার না করতে পারে । যেমন বাংলাদেশ প্রচুর মানুষ আছে যারা দুর্নীতি করে কালো টাকার পাহাড় জমিয়েছেন। তারা সুযোগ পেলেই ক্রিপ্টো এর মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করে ফেলবেন। এছাড়া নিরাপত্তা জনিত ব্যাপার আছে সেগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।তবে মাথা ব্যাথা মাথা কেটে ফেলার চিন্তাও করা যাবেনা।
৩। দেশে ক্রিপ্টো স্টার্ট আপ প্রমট এবং উতসাহিত করতে হবে। ক্রিপ্টো এর একটা বৈশিষ্ট্য হল এর কোন জিওগ্রাফিকাল বেরিয়ার নেই । এখানে বাংলাদেশী যা, অ্যামেরিকান ও তা। তাই ক্রিপ্টো বেজড স্টার্ট আপ এ অংশগ্রহণ করার বিরাট একটা সুযোগ আছে। এজন্য ICO (INITIAL COIN OFFERING ) বৈধটা দেওয়া উচিত এবং একে লিগাল ফ্রেম এ নিয়ে আসতে হবে । তাহলে শুধু বাংলাদেশী না, অনেক বিদেশি আসবে বাংলাদেশ ভিত্তিক গ্লোবাল স্টার্ট আপ করতে। শুধুমাত্র ICO দিয়ে দেশ পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব।
উপসংহার
অনেকে মনে করতে পারেন আমি অতিরঞ্জিত করছি। উন্নত অন্নুনত সব দেশেই এ টপিক এ অনেক স্কেপ্টিক আছে। হ্যাঁ এটা ঠিক যে ক্রিপ্টো দিয়ে অনেক অন্যায় হচ্ছে, ড্রাগ , মাদক, মানি লন্ডারিং, জঙ্গি অর্থায়ন, ট্যাক্স ফাকি অনেক কিছুই হতে পারে । সেসব কিন্তু ডলার বা টাকা দিয়েও হতে পারে । কাউকে হাতে হাতে ডলার দিলে সেটা কেউ জানবে না কিন্তু ক্রিপ্টো তে লেনদেন করলে সব কিছুর রেকর্ড থেকে যায়। আর মাথা ব্যাথা এর জন্য ত মাথা কেটে ফেলা যাবেনা।
অনেকে মনে করে থাকেন ক্রিপ্টো একটা বাবল, যেকোনো সময় ফেটে যাবে । এটা ঠিক যে হয়ত ভবিষ্যতে মার্কেট ক্রাশ করতে পারে, নতুন কোন দেশ এটি ব্যান করতে পারে, এরকম অনেক কিছুই হতে পারে , কিন্তু দিনশেষে ক্রিপ্টো টাকা/ ডলার জায়গা নিবে এ ব্যাপারে আমি দৃঢ় বিশ্বাসী। যেমন ২০০০ সালের ডট কম বাবল এর পর কিন্তু ফেসবুক গুগল এর মত কোম্পানি গুলো হয়েছে। ডট কম বাবলে কিন্তু ইন্টারনেট বিপ্লব থেমে যায়নি, বরং আরও শক্তভাবে ফিরে এসেছে। যেকোনো বিপ্লব এ যেমন অনেক ঘাত প্রতিঘাত থাকে তেমনি এ ক্রিপ্টো বিপ্লব এ অনেকে প্রথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । তবে ক্রিপ্টো বিপ্লব একটি সুষম, সবার জন্য সমান, মুক্ত একটি পৃথিবী উপহার দিবে।
.
.
শেখ সৌরভ 

No comments

Powered by Blogger.